গাজী কালুর দরগাহঃ গাজী কালু এক কিংবদন্তী। যখন এসব অঞ্চল গভীর অরণ্যতে পূর্ণ ছিল সেই দূর অতীত থেকে প্রচলিত এই কাহিনী। জানা যায়, গাজী এবং কালু শাহ নামক দুই সাধক পীর তাদের সাধনার দ্বারা বন-জংগলের সমস্ত হিংস্র পশু পাখির উপর কর্তৃত্ব লাভ করেন। তাদের কথা বা নির্দেশ ছাড়া হিংস্র পশুকুল কাউকে আক্রমণ করত না। এ বিষয়টি সু্দরবনের মধু, মোম আহরণকারী, বাওয়ালী ও জেলেরা জানত। তাই তারা বনে নামার আগে গাজী কালু পীরের দরগায় মানত করতে যেন তারা হিংস্র জন্তু আক্রমন থেকে নিরাপদ াকতে পারে। আমতলী উপজেলা হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন টেপুরা মৌজায় এই গাজী কালুর দরগা অবস্তিত, স্থানীয় ভাবে জানা যায় গাজী ও কালু পরস্পর দুই ভাই মতান্তরে মামা ভাগিনা ছিলেন। তাঁরা ছিলেন জাগ্রত পীর। মাঝে মাঝেই তারা এই টেপুরার দরগায় সাধনের জন্য বসতেন। এখানে তাদের দরগাহ বাড়িতে দুজনের ধ্যানের জন্য দুটি আসন রয়েছে। কাছাকাছি রয়েছে একটি পাকা ইন্দিরা, সামান্য দূরে রয়েছে তাদের শিষ্য বা বারো আউলিয়ার বসার স্থান। এলাকাটি দুর্গম, যথাযথ ভাবে সংরক্ষিতও নয়। কিন্তু প্রতিদিন বিপুল সংখাক পুন্যার্থী আগমন করেন এই মাজারে। প্রতি বছর ২৯ মাঘ ও ২৯ ফাল্গুন এখানে ওরশ অনুষ্ঠিত হয়। এখন আর সেই ঘন বন নেই, নেই এখানে সেই হিংস্র পশুও, কিন্তু রয়ে গেছে গাজী কালুর দরগাহ আর তাঁদের সেই কীংবদন্তী। এখনো সুন্দর বনের কাঠ-মধু-মৎস্য আহরণকারীরা পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করে গাজী কালুর নাম।
চাওড়া মাটির দুর্গঃ আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা গ্রামে একটি সু-উচ্চ মাটির ঢিবি দেখা যায়। মনে করা হয় এটি একটি মাটির দুর্গ। মোগল যুগে মগ পর্তুগীজ জনদস্যুদের দমনের জন্যে শাহ সুজা, শায়েস্তা খা, আগাবাকের খা ও পরবর্তী সুবেদারগণ বৃহত্তর বরিশাল এলাকায় বহু মাটির দূর্ঘ নির্মাণ করেছিলেন, এটি তারই একটি। চন্দ্রদ্বীপের রাজা কন্দর্পনারায়ণ, রামচন্দ্র ও কীর্তিনারায়ণ, গুঠিয়া, রায়পুরা, জাগুয়া, কাগাগুরা, নথুল্লাবাদ, হলুদপুর, রহমতপুর, কাশীপুর, রাজাপুর প্রভৃতি স্থানে দূর্ঘ নির্মাণ করেছিলেন। রেনেলের ১৭৬৪-১৭৭২ খ্রিস্টাব্দের মানচিত্রে রামনাবাদ নদীর তীতে রাজা কন্দর্পনারায়ণ নির্মিত দুটি দূর্ঘ দেখা যায়। বর্তমানে দূর্ঘ দুটির কোন চিহ্ন নেই। আগুনমুখা নদীতে প্রায় ১০০ বছর আগে দূর্ঘ দুটি বিলীন হয়ে যায়। চাওড়া মাটির দূর্ঘটি আমতলীর চাওড়া নদীকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছিল। চাওড়া নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কি.মি. এখন আর নদীর সেই উন্মত্ত প্রবাহ নেই তাই শুধু কালের সাক্ষী হয়ে দূর্ঘটি ঢিবি আকারে আজও টিকে আছে।
ফকিরখালী গ্রামের দীঘি ও মাটির টিলাঃ সুলতানী আমলে বরিশালে মুসলমানদের আগমন ঘটে। মোঘল জাহাঙ্গীরের সময়ে পটুয়াখালীতে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ সময়ে আরব, ইরান, ইরাক ও দিল্লী থেকে অনেক পীর আউলিয়া ও অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসেন। তারা দীর্ঘ খনন করে মসজিদ ও হানকা শরীফ নির্মাণের জন্য জায়গা উচু করতেন। ফকিরখালী গ্রামে তেমন একটি দীঘি ও উচ্চ মাটির টিলা দেখা যায়। ধারণা করা হয়, এখানে কোন পীর অথবা ফকিরের আস্তানা ছিল। গ্রামের নামের সাথে উক্ত ফকির শব্দটি জড়িয়ে থাকায় এ ধারণা যুক্তিসঙ্গত বলে অনেকে মনে করেন।
পায়রা নদীর পাড়ঃ আমতলী উপজেলার বড়বগী, পচাঁকোড়ালিয়া, আপড়পাংগাশিয়া, আমতলী ইউনিয়ন, আমতলী পৌরসভা, চাওড়া ও গুলিশাখালী ইউনিয়নের কোল ঘেষে পায়রা নদী প্রবাহিত। এ নদীর আমতলী পৌর এলাকার দেড় কিলোমিটারে রয়েছে কংক্রিটের ব্লক। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে গ্রীস্ম ও শীত মৌসুমে এ নদীর পাড়ে ভ্রমন পিপাশুদের কোলাহল দেখা যায় ও বিভিন্ন স্থান থেকে পিকনিক করে থাকে। এ রকম স্থান এ বিভাগে বিরল।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস